চোরচক্রবর্তী রাজা | দ্বিতীয় পর্ব

 বাংলা গল্পের বই pdf


পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন

গোপাল এখন চতুর চোর, মা কালীর পাঁঠা খাবার আয়োজন সে করতে লাগল। তারপর একদিন সে পাঁঠা খেয়ে ফেলল। মা কালী পাঁঠা দেখতে না পেয়ে রেগে আগুন। যে তার পাঁঠা খেয়েছে, তাকে সে কঠিন শাস্তি দেবে।

প্রথমে লোহার খাঁড়াদের ডাকা হলো, "কে পাঁঠা কেটেছে?" বলার জন্য। কেউ বলতে পারে না। তারপর চন্দ্র, সূর্যকে ডাকা হলো, তারা বলল, "আমরা যতক্ষণ আকাশে ছিলাম ততক্ষণ পাঁঠা কাটা দেখি নাই।" ডাকা হলো আগুন, মাটি ও ধাতু নির্মিত হাঁড়িকে, ডাকা হল জলকে। আগুন বলে 'রাঁধি নাই', জল বলে 'সিদ্ধ করি নাই', হাঁড়িরা বলে 'আমাদের গর্ভে রেখে রাঁধা হয় নাই'।

তখন মা কালী বলল, "যে আমার পাঁঠা খেয়েছিস, আমার নিকট আয়, আমি বর দিব।" বৃদ্ধ গুরুকে সাথে নিয়ে গোপাল মা কালীর কাছে হাজির হয়ে জোড় হাতে দাঁড়াল। মা কালী বলল, "কিভাবে পাঁঠা খেয়েছিস বল।"

গোপাল বলল, "পাঁঠা কেটেছি সূর্য অস্ত গিয়েছে, চাঁদ উঠে নাই সেই সময়। মা কালীর হাতের খাঁড়ায় কেটেছি যার জন্য সে ভয়ে বলেনি। মরা ফেলার ছুতো হাঁড়ি ধুয়ে, ধান ভিজে জলে আঁতুড়ের কঠোর অশৌচ আগুনে রান্না করেছি। যার জন্য কেউ সাক্ষ্য দিতে পারে নি।" এই কথা শুনে মা কালী তাকে বর দিল, "চুরি করার সময় তোকে কেউ ধরতে পারবে না।" গুরু-শিষ্য মা কালীকে প্রণাম করল।

চুরি বিদ্যা শিক্ষা শেষ হলে মায়ের নিকট হতে লিখিত বার্তাটি নিয়ে দাদুর রাজ্যে যাবার আয়োজন করল গোপাল। তৎপূর্বে সে দাদুকে লিখল, "এক বড় চোর তোমার রাজ্যে চুরি করতে যাবে, বল থাকেতো তাকে আটকাও।" রাজা সব শুনে গেটে গেটে পাহাড়া বসাল।

দুই রাজ্যের মধ্যে আছে এক নদী। বিনা অনুমতি পত্রে পারাপার নিষিদ্ধ হলো বিদেশীর। গোপাল নদীর এপাড়ে অন্য রাজ্যের ছোট শহরে নানা কাজ করতে লাগল। একদিন এলো এক মাদুর বিক্রেতা। সে যাবে নদীপারের রাজ্যে মাদুর বেচতে। কিন্তু তার এক বোঝা মাদুরের একটা লোক দরকার। গোপাল মজুরীর বিনিময়ে মাদুর বয়ে দিতে রাজি হলো।

মাদুর বিক্রেতা তার ও তার মুনিশের জন্য নৌকা পাড়ের ছাড়পত্র যোগাড় করল। এইভাবে মাদুর বিক্রেতার সঙ্গে নদী পার হয়ে একটা গাড়ীতে মাদুর তুলে দিল। নদীর ধারে মাঠ। মাঠে চাষীরা চাষ করছে। মাঠের শেষে নগরের সিংহদ্বার দেখা যাচ্ছে। নগরে ঢোকার ছাড়পত্র তার নিকট নাই।

এক স্থানে সে দেখল এক বৃদ্ধ চাষী জমিতে লাঙ্গল দিচ্ছে। বুড়ো ক্লান্ত, ছেলেপিলে নাই। জলখাবার গামছায় বাঁধা। বুড়োর জমির আলে গোপাল বসল ও সুখ দুঃখের কথা বলতে লাগল। বুড়ো জল খেতে এলো। গোপাল ততক্ষণ তার লাঙ্গলটা বয়ে দিতে চাইল। বুড়ো রাজি হলো।

বুড়োর জমির আলে ছিল একটা বটগাছ। তার ছায়ায় জলখাবার খেয়ে গামছাটা বিছিয়ে বুড়ো একটু গা-গড়া দিয়েছে, আর বুড়ো ঘুমিয়ে পড়েছে। গোপাল তখন লাঙ্গলটা কাঁধালো দিয়ে জোয়ান বলদ দুটোর পিঠে মেরেছে দুই বাড়ি। গরু দুটো ঘরমুখো হয়ে ছুটতে লেগেছে। সেও গরু দুটোর পিছনে পিছনে শহরের সিংহদ্বারে ঢুকে পড়েছে। তারপর গরু দুটো ছেড়ে দিয়েছে।

এদিকে বুড়ো ঘুম হতে উঠে দেখে গরু নাই জমিতে। কাঁধালো লাঙ্গল নিয়ে গরু দুটো ছুটছে। বুড়োও ছুটতে লেগেছে। শহরে ঢুকে লাঙ্গল গরু নিয়ে সে বাড়ি চলে গেল।

পথের ধারে ছিল এক নাপিতের চুল কাটার ঘর। গোপাল নাপিতের ঘরে গিয়ে বসল ও শুধালো, "ভায়া, চার টাকার ছাঁট ছাঁটতে পারবে?"

নাপিত: হ্যাঁ, পারব।

নাপিত গোপালের চুল ছাঁটতে লাগল। চুল ছাঁটা শেষ হলে গোপাল বলল, "এতো চার টাকার চুল ছাঁটা হয় নাই। থাক, চার টাকাই দেব। তোমার কাছে একশো টাকার ভাঙানি আছে?"

নাপিত: না।

গোপাল বলল, "তোমার একটা ছেলে পাঠিয়ে দাও, টাকা ভাঙিয়ে তার হাতে টাকা দিচ্ছি।" গোপাল নাপিতের ছেলেকে নিয়ে ঢুকল এক মিষ্টির দোকানে। দোকানদারকে বলল, "দু'ঠোঙা ভাল মিষ্টি দাও।" তারা তাই দিল। নাপিতের ছেলে ও গোপাল সেই মিষ্টি খেয়ে বলল, "দু'সের মিষ্টি বেঁধে দাও।" ময়রা দু'সের মিষ্টি বেঁধে দিল। দাম কত, শুধিয়ে বলল, "একশো টাকার ভাঙানি আছে?" ময়রার ছোট দোকান বলল, "না, ভাঙানি হবে না।" গোপাল বলল, "আমার ছেলে থাকল, টাকা ভাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।"

মিষ্টি নিয়ে একজন মজুরকে ছুটে টাকা দিয়ে তার সঙ্গে যেতে বলল। মজুর নিয়ে সে ঢুকল একটা বড় কাপড়ের দোকানে। বলল, "দু'হাজার টাকার ধুতি, শাড়ী, জামা বেঁধে দাও, কিনব।" কাপড় বেঁধে দিল দোকানদার। বলল, "একটা ধুতি দেখি।" একটা ভাল ধুতি নিয়ে সে বলল, "আমি ধুতিটা একটু দেখিয়ে আসি আমার ভাইকে, সে পাশের দোকানে মিষ্টি খাচ্ছে। তারপর এখুনি এসে টাকা দিয়ে কাপড় নিয়ে যাব। থাকল আমার লোক।" মজুরটি বসে থাকল। মিষ্টি আর কাপড় নিয়ে গোপাল অন্য দিকে চলে গেল।

ক্রমে নাপিত, ময়রা ও কাপড়ওয়ালা সব জানতে পারল। "চোর এসে গিয়েছে" বলে একটা সোরগোল উঠল। এদিকে গোপাল ধুতি জামা ভাল ভাবে পরে মিষ্টির হাঁড়ি ও নতুন কাপড়টা থলেতে ভরে বাজার ছাড়িয়ে একটা পাড়ায় এসে তার মাসীর খোঁজ করতে লাগল। গোপাল বলল, "খুব ছোটতে এই পাড়ায় আমি আমার মায়ের সঙ্গে বড় মাসীর নিকট ছিলাম।"

সেই পাড়ায় ছিল এক বুড়ী। সে থাকে একা। তার এক বোন ও বোনপো ছিল। তারা এক সময় কিছুদিন তার নিকটে ছিল। পাড়ার লোকেরা বুড়ীর বাড়ীতে গোপালকে নিয়ে গেল। বুড়ীকে গোপাল ধুতি ও মিষ্টির হাঁড়িটা দিল।

এই বুড়ী রাজ বাড়ীতে কাজ করত। সে এসে বৈকালে বোনপোকে বলল, "বাবা, রাতে বেরিয়ো না। শহরে এক বড় চোর এসেছে শুনে এলাম। সে নাপিত, ময়রা ও এক কাপড়ের দোকানে চুরি করেছে। আজ রাতে রাজার কর্মচারী সাত ভাই পালোয়ান শহরে টহল দেবে।"

গোপাল শুধালো, "তাদের বাড়ীতে আর কে আছে?" বুড়ী বলল, "তাদের একটা ছোট বোন আছে। বহুদিন বিয়ে হয়েছে, তবে জামাই অনেকদিন আসেনি।"

রাতে গোপাল কোঁচানো ধুতি জামা পরে, জামাই সেজে হাতে এক হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে পালোয়ানদের বাড়ি গেল। বাড়ীর দরজার নিকটে ছিল একটা থাম। থামের আড়ালে সে লুকিয়ে রইল। ঘোড়ায় চেপে সাত ভাই পাহারাওয়ালা বেরিয়ে গেল।

গোপাল জামাই সেজে তাদের বাড়ীতে ঢুকল। অনেকদিন পর জামাই এসেছে। বাড়ীতে ভাল খাবার তৈরী হলো। সাত বৌ ননদকে নানা রকম সোনার গহনা, সোনার কাজ-করা শাড়ী পরিয়ে জামাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিল। গোপাল তার ইজ্জত নষ্ট করল না। সে ঘুমিয়ে গেলে তার সব গহনা একে একে খুলে নিল, তারপর সোনার কাজ-করা কাপড়টাও খুলে নিয়ে মেয়েটাকে উলঙ্গ রেখে গহনা ও কাপড় নিয়ে অন্য পথে চম্পট দিয়ে মাসীর বাড়ীতে শুয়ে পড়ল।

অনেক রাতে জেগে উঠে স্বামীকে ঘরে না পেয়ে, নিজেকে গহনাহীন উলঙ্গ দেখে মেয়েটি কাঁদতে লাগল। বৌদিরা ছুটে এলো। সব দেখে সঙ্গে সঙ্গে কাপড় এনে পরতে দিল। ভোর রাতে সাত ভাই এসে সব শুনল। রাজা শুনল। সাত ভাই পালোয়ান পাহারাদারদের টহল দেওয়া বন্ধ হলো। রাজা হুকুম দিল আজ রাতে শহর কোতোয়াল একা পাহারা দেবে। কারণ "অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।"

বুড়ী এসে বোনপোকে বলল, সব কথা। সব শুনে গোপাল বলল, "কোতোয়ালের কে আছে?" মাসীঃ "কোতোয়ালের কেউ নাই। তবে মন্ত্রী খুব শিবের ভক্ত। শিব তার ইষ্ট দেবতা। শিব পূজা না করে মন্ত্রী কিছু করে না।"

গোপাল বলল, "মাসীর কাছে যাই। কোতোয়ালের কে আছে?" বুড়ী বলল, "তার এক ভাইপো আছে, ৬।৭ বৎসর হলো আসেনি, থাকে কোথাকার এক শহরে, তোর মত বয়স। তুই বাবা দিনে যেখানে যাবি যাস, রাতে কোথাও যাস্ না।"

"না মাসী, আমি রাতে কোথাও যাব না।" সেদিন সন্ধ্যার পর কোতোয়ালের ভাইপো সেজে তার বাড়ীতে গেল গোপাল। বহুদিন পর ভাইপোকে পেয়ে কাকা খুসী। কোতোয়ালের কোন সন্তানাদি ছিল না।

এদিকে কোতোয়াল তৈরী হচ্ছে শহরে টহল দেবার জন্য। এই দেখে ভাইপোবেশী গোপাল শুধালো: "কাকা, কোথায় যাবে?"

কাকা: "শহরে এক বড় চোর এসেছে, সে কাল সাতভাই পালোয়ানদের বাড়ীতে চুরি করেছে। রাজা আমাকে এই চোর ধরার হুকুম দিয়েছে। তাই চোর ধরতে যাচ্ছি।"

ভাইপো: "আমি যাব তোমার সঙ্গে।"

কাকা: "না তোমাকে যেতে হবে না। বড় চোর, কখন কি হয়।"

কিন্তু ভাইপো নাছোড়বান্দা। শেষে ভাইপোকে নিয়ে কোতোয়াল শহরে বেরুল। তারা দুইজনে বড় বড় রাস্তা, জেলখানা, রাজবাড়ী আশপাশ পাহারা দিতে লাগল। ভাইপোর ব্যবহারে কাকা খুসী।

একস্থানে ভাইপো দেখল একটা যন্ত্র। ভাইপো বলল, "এটা কি?"

কাকা: "এটা দুষ্ট বন্দীদের ধরে রাখার যন্ত্র। এই চাকটা ডাইনে ঘোরালে এটা উঠে পড়বে। এর নীচে দুষ্ট চোরদের রেখে বাঁয়ে ঘোরালে এটা চোরের বুকে চেপে বসে যাবে।"

ভাইপো যন্ত্রটার কাছে শুয়ে পড়ে যন্ত্রটা পরখ করতে চাইল। কাকা বলল, "না, কোথায় বুকে পিঠে লাগবে। আমি এর নীচে শুচ্ছি, তুমি চাকাটা বাঁদিকে ঘোরাও।"

কোতোয়াল যেই শুয়েছে, গোপাল আচ্ছা করে কয়েক পাক দিয়ে কোতোয়ালকে বন্দী করে চলে গেল মাসীর বাড়ী। সকালে বন্দী শহর-কোতোয়ালকে উদ্ধার করা হলো।

বুড়ী রাজ বাড়ীতে কাজ করতে গিয়েছিল। সে সব কথা বোনপোকে বলল। আর বলল, "আজ স্বয়ং মন্ত্রী শহর টহল দেবে।" গোপাল বলল, "মাসী, মন্ত্রীর কে আছে?"

মাসী: "মন্ত্রীর কেউ নাই। তবে মন্ত্রী খুব শিবের ভক্ত। শিব তার ইষ্ট দেবতা। শিব পূজা না করে মন্ত্রী কিছু করে না।"

মন্ত্রী শিবপূজা করে রাত্রে চোর ধরতে গেল। এ দিকে গোপাল এক গোয়ালার ঘর হতে খুলে আনল একটা জোয়ান ষাঁড়। তাকে নিয়ে গেল এক তেমাথার রাস্তায়। সেখানে থলেতে করে আনল এক থলে খোল। খোল খেতে দিল তাকে। খোল খেয়ে ষাঁড়টি তার সামনে শুয়ে পড়ল।

গোপাল শিব সেজে গাঁজা খেতে লাগল। তার পরনে বাঘছাল, মাথায় জটা, হাতে ত্রিশূল, জটার উপর বাঁকা একফালি চাঁদ।

টহল দিতে মন্ত্রী তেমাথার মোড়ে এসে হাজির। এখানে শিব দেখে সে গড় হয়ে প্রণাম করল। গোপাল শিববেশী। বলল, "আমি তোর ইষ্ট দেবতা। তোর পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে তোকে বর দিতে এসেছি। তোর অক্ষয় স্বর্গ লাভ হবে। আমার এই ষাঁড়ের পিঠে চেপে চোখ বন্ধ করে বস। এই ষাঁড় তোকে স্বর্গলোকে নিয়ে যাবে।"

ষাঁড়ের পিঠে মন্ত্রীকে চাপিয়ে দিতেই, ষাঁড় তাকে নিয়ে গোয়াল ঘরে চলে গেল। দড়ি খোলা ষাঁড়। অন্য গরুদের গোঁতাতে লাগল। সব গরু দড়ি ছিঁড়ে গোঁতাগোঁতি করতে লাগল। শুনে গোয়ালারা ছুটে এলো গোয়ালে। "চোর! চোরকে ধরে ফেলল তারা।" বেঁধে রাখল। সকাল হলে দেখল মন্ত্রী। শুধালো। মন্ত্রী রাতের সব খবর বলল।

বুড়ী এসে বোনপোকে সব কথা বলল। আর বলল, "আজ রাতে আমিই পাহারা দেব।" গোপাল বলল, "আজ রাতে আমিই পাহারা দেব।" এসে দেখে এক গরু তাকে গোয়ালের খুঁটিতে বেঁধে রাখল।

দিন গেল রাত এলো। রাজা রাজ পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে শহর টহল দিতে বেরুল। বীরদর্প ভরে রাজা খুঁজে বেড়ায় চোরকে। মাসীর নিকট রাজার পাহারা দেওয়ার খবর শুনে ছেঁড়া কাপড় পরা এক গরীব সেজে রাস্তার পাশে একটা ভাঙা ঘরে জাঁতা ঘুরিয়ে গম ভাঙতে লাগল।

পাহারা দিতে দিতে রাজা জাঁতা-ওয়ালার নিকট শুধালো, "এদিকে কোন লোককে যেতে দেখছিস্?" জাঁতা-ওয়ালা বলল, "হুজুর যখন পূর্বমুখে গেলেন, আর একটা লোক চকিতে পশ্চিম মুখে চলে গেল।" কথা শুনে রাজা পশ্চিম মুখে ঘোড়া ছুটাল। কিন্তু দেখা পেল না।

ফিরে এসে আবার শুধালো, "কইরে বেটা, দেখতে পেলাম না।" সে বলল, "হুজুর যেই আপনি পশ্চিমে গিয়েছেন, আর বেটা পূর্বদিক চলে গেল।" এইভাবে পূর্ব পশ্চিমে রাজা অনেকক্ষণ ফিরল।

রাজা বলল, "তুই আমার পোশাক পরে ঘোড়ায় চাপ, আর আমি তোর পোশাক পরে এখানে থাকি। তা'হলে বেটাকে ধরে ফেলব।" তাই হলো। গোপাল রাজার পোশাক পরে ঘোড়া ছুটিয়ে রাজবাড়ী চলে গেল। রাণী দরজা খুলে দিল। গোপাল দরজার উপর লিখিত বার্তাটি এঁটে রাণীর পাশে শুয়ে পড়ল।

সকাল হলে ছেঁড়া কাপড় পরে রাজা এসে হাজির। রাজা যেই ঘরে ঢুকতে যাবে, অমনি গোপাল বলল, "এ রাজ্য আমার, তুমি দূরে চলে যাও।"

রাজা দেখে এতো সেই জাঁতা-ওয়ালা! রাজা বলল, "বেটা তোর প্রাণদণ্ড দেব। তুই চোর, তুই আমার সঙ্গে রহস্য করছিস।" গোপাল বলল, "দরজায় কী লেখা আছে পড়।" রাজা নিজের 'লিখিত বার্তাটি' পড়ে সব জানতে পারল। তারপর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

তারপর রাজা তাকে 'চোর চক্রবর্তী' উপাধি দিয়ে সিংহাসনে বসাল। নতুন রাজা তার মাকে কাঠুরে সর্দারের বাড়ি হতে নিয়ে এলো। তারপর কাঠুরে সর্দার ও বুড়ী মাসীকে অনেক কিছু ইনাম দিল।

[ ভোলা জেলার চর ফ্যাশন থানার আব্দুল কাদের খানের নিকট হতে সংগৃহীত।]

Post a Comment