সাদ ও সাইদ । বাংলা লোককাহিনী

সেরা রহস্য গল্প

এক গাঁয়ে বসীর নামে এক গরীব লোক ছিল। এক গরীবের সুন্দরী মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। তাদের ছিল দুই ছেলে সাদ ও সাইদ।

একদিন বসীর সমুদ্রের ধারে শুঁটকি মাছ কিনতে গিয়ে একটি পাখির বাচ্চা কুড়িয়ে পেল। বাচ্চাটি উড়তে পারত না। বসীর যত্ন করে সেটিকে বাড়ি নিয়ে এলো। বাড়িতেই পাখিটি থাকত ও চরণ করত। ক্রমে পাখিটি বিরাট বড় হলো। পাখিটি ছিল সি-মোরগ। সি-মোরগটি মোটা মোটা ডিম পাড়ত। সেই ডিম নিকটবর্তী হাটে বসীর বিক্রি করত। বসীর তার দুই ছেলে সাদ ও সাইদকে পাঠশালায় পড়াত। এইভাবে তাদের দিন কাটছিল।

সেই অঞ্চলে ছিল এক বিত্তশালী লোক, যে রাজার মতো বসবাস করত। এই হাটটি ছিল তারই। একদিন সে হাটে বসীরকে ডিম বিক্রি করতে দেখল। সেই লোকটি সি-মোরগ চিনত। ডিম দেখে সে বুঝতে পারল, এটা সি-মোরগের ডিম। বসীরকে সে শুধাল, এই ডিম সে কোথায় পেয়েছে। বসীর বলল, তার বাড়িতে একটা বড় মুরগি আছে, তারই ডিম। লোকটি বুঝল, মুরগিটি আসলে সি-মোরগ। লোকটি শুনেছিল সি-মোরগের মাথা রান্না করে যে খাবে, সে প্রতি রাতে তার শিয়রে পাবে এক তোড়া টাকা। আর সি-মোরগের মাংস যে খাবে, সে কিছুদিনের মধ্যে রাজা হবে।

ঐ বিত্তশালী লোকটি আরও বড় লোক ও রাজা হবার বাসনায় সি-মোরগের মাথা ও মাংস খাবার ইচ্ছা মনে মনে ঠিক করল। সে একটি কুটনীকে ঠিক করে তাকে বসীরের স্ত্রীর কাছে পাঠাল। কুটনী মেয়েটি বসীরের স্ত্রীকে বলল, ঐ বড়লোক তোমাকে বিয়ে করতে চায়, সে তোমায় ভালোবাসে। এইভাবে পাঁচ-সাত কথা বলে সে বসীরের স্ত্রীর হাতে বড় লোকটির দেওয়া একশো টাকা দিল। বসীরের স্ত্রী টাকা পেয়ে রাজি হয়ে গেল, কারণ সে চরিত্রের দিক থেকে ভালো মেয়ে ছিল না।

ঐ বড় লোকটি রাতে গোপনে বসীরের স্ত্রীর কাছে আসত ও প্রতিদিন একশো টাকা দিত। দিন দশেক পর ঐ লোকটি আর আসে না। এক-দু-তিন দিন পার হবার পর বসীরের স্ত্রী সেই কুটনী মেয়েটিকে ডেকে পাঠাল। কুটনী মেয়েটি এলে বসীরের স্ত্রী শুধাল, কেন তার প্রেমের লোক আসছে না। কুটনী মেয়েটি বলল, ঐ বড় লোকটি মুরগির মাংস ও কল্লা (মাথা) খেতে চায়। তুমি মুরগির মাংস খাওয়াওনি, তাই আসে না। এই কথা শুনে বসীরের স্ত্রী বলল, আমার একটা বড় মুরগি আছে, তার মাংস ও কল্লা রান্না করে দেখে দেব। কুটনী চলে গেল এবং বড় লোকটিকে সব কথা বলল।

বসীরের স্ত্রী সি-মোরগ জবাই করে কল্লা ও মাংস আলাদা করে রেখে হাঁড়ির নিচে একটি ভালো হাঁড়িতে লুকিয়ে রাখল। তারপর সাবান মেখে স্নান করতে গেল। কারণ রাতে তার সেই প্রেমিক বড়লোক আসবে; আর এলেই একশো টাকা পাবে। বসীরের স্ত্রী যখন স্নানে ব্যস্ত, তখন তার দুই পুত্র সাদ ও সাইদ পাঠশালা থেকে জলখাবার খেতে এলো। মাকে খাবার দেওয়ার জন্য তারা ডাকল। মা তখন নিজের সুখের স্বপ্নে বিভোর। তাই সে বলল, ঘরে খাবার আছে, নিয়ে সব খাও।

ছেলে দুটি ঘরে খেতে গেল। তারা ঘরে গিয়ে মুরগির মাংসের গন্ধ পেল। গন্ধ শুঁকে তারা লুকানো হাঁড়ি থেকে সি-মোরগের রান্না-করা মাংসের বাটি বার করল। সাইদ কল্লাটি খেল আর সাদ চেটেপুটে সব মাংস খেয়ে নিল।

রাতে বসীরের স্ত্রীর প্রেমিক সি-মোরগের কল্লা-মাংস রান্না করে চলে গেল। সি-মোরগের কল্লা বা মাংস হজম হয় না। কুটনী মারফৎ লোকটি বলে পাঠাল, তার দুই ছেলের পেটে কল্লা ও মাংস আছে। সে খেতে পায়নি। তাদের মেরে পেট চিরে কল্লা-মাংস বার করে খাওয়াতে হবে, তবেই সে তাকে বিয়ে করবে। বসীরের স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে ছেলেদের মেরে তাদের পেট চিরে কল্লা ও মাংস বের করে দেবে বলে কথা দিল।

বসীর একথা শুনল। সে একটা চিঠিতে সব কথা লিখে, গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বলল। চিঠিটি বসীর বাড়ির দরজার উপর টাঙিয়ে দিল। সাদ সবার আগে চিঠিটি পড়ে সব জানতে পারল। দুই ভাই তাদের মায়ের ব্যবস্থা দেখে অভিমানে দূর দেশে পালিয়ে গেল। দুই ভাই চলতে চলতে রাত হলে এক গাছতলায় শুয়ে পড়ল।

এই দেশে ছিল এক অপুত্রক রাজা। তিনি হঠাৎ মারা গেলেন। তার শেষকার্য শেষ হলে, কে রাজা হবে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে লাগল। বৃদ্ধ মন্ত্রী বলল, তর্ক-বিতর্ক-ঝগড়ায় কাজ নাই। রাজবাড়ির সাদা হাতিকে ছেড়ে দাও। তার পিঠে বেঁধে দাও রাজসিংহাসন, সে যাকে সিংহাসনে চাপিয়ে আনবে, সেই হবে এদেশের রাজা।

সাদা হাতি ছাড়া পেয়ে ছুটে চলে গেল সেই গাছতলায়, যেখানে শুয়ে আছে সাদ ও সাইদ। হাতি সাদকে শুঁড় দিয়ে তুলে সিংহাসনে চাপিয়ে রাজপুরী নিয়ে এলো। সাদ সে দেশের রাজা হলো।

সকাল হলে সাইদ দেখল সে একা, আর তার শিয়রে এক তোড়া টাকা। সাইদ ভাবল, কেউ বোধ হয়, ভুল করে টাকাটা ফেলে গেছে। তাই সে টাকার তোড়াটা আগলে বসে থাকল। সকাল থেকে দুপুর গড়াল। তার ভাই বা কেউ ফিরে এলো না। তখন সে টাকার তোড়াটা মাথার পাগড়িতে লুকিয়ে পথ হাঁটতে লাগল।

অনেক দূর এসে সে একটা বাগানবাড়ি দেখতে পেল। বাড়ির গেটের মুখে ঝুলছে একটা ডঙ্কা (বড় ঘণ্টা)। পাশে লেখা আছে: “যে বাপের ব্যাটা, সেই ডঙ্কায় ঘা মারুক।” এই লিখন দেখে সাইদ ডঙ্কায় ঘা দিল। একটা চাকর ডঙ্কার ঘা শুনে বেরিয়ে এলে সাইদকে ভিতরে নিয়ে গেল।

এই বাগানবাড়িতে থাকে এক বাদশার মেয়ে। বাদশার মেয়ের ইচ্ছা ছিল সুপুরুষ, সাহসী ও বেপরোয়া যুবককে বিয়ে করা। তাই সে বাগানবাড়ি করে বসবাস করছে। সাইদ এই কথা শুনে বলল, আমি তোমাকে প্রতিদিন এক তোড়া করে টাকা দেব। বাদশাজাদী বলল, বেশ।

প্রতিদিন সাইদ বাদশাজাদীকে এক তোড়া করে টাকা দেয়। বাদশাজাদী ভাবল, এ চুরি করে না, কোথাও যায় না, তবে টাকা কিভাবে পায়! একদিন রাতে বাদশাজাদী সাইদকে শুধাল, কিভাবে তুমি প্রতিদিন এক তোড়া টাকা পাও? সাইদ বলল, সি-মোরগের মাথা আমার পেটে আছে, তাই প্রতিদিন টাকা পাই।

বাদশাজাদী একথা শোনার পর, একদিন সন্ধ্যায় মদ আর মাংস নিয়ে বসল। নিজে মদ খাওয়ার ভান করল, আর সাইদকে খাওয়াতে লাগল। সাইদ মদ খেয়ে নেশায় চুর হয়ে বমি করতে লাগল। বমি করতে করতে সি-মোরগের কল্লা উগরে ফেলল। বাদশাজাদী সেটি বেশ করে ধুয়ে বাক্সে লুকিয়ে রাখল। আর সাইদ বাদশাজাদীকে টাকা দিতে পারে না। বাদশাজাদী বলে, টাকা দাও? সাইদ বলে, কাল দেব। এইভাবে দশ-বারো দিন কাটল। টাকা দিতে না পারায় বাদশাজাদী সাইদকে তাড়িয়ে দিল।

সাইদ চলেছে পথ দিয়ে। অনেক দূর গিয়ে সে দেখতে পেল, তিন ভাই ঝগড়া করছে। সাইদ শুধাল, তোমরা ঝগড়া করছ কেন? তারা বলল, আমাদের বাপ রেখে গেছে একটি জালা (পাত্র), একটি গদি ও একটি চাবুক। কে কোনটা নেবে তাই নিয়ে চলছে ঝগড়া। সাইদ শুধাল, এগুলোর কি এমন গুণ আছে যার জন্য তোমরা ঝগড়া করছ?

তারা বলল, এই জালাটার গুণ হলো, এর মধ্যে হাত রেখে যে কেউ, যা খেতে চাইবে, জালা সঙ্গে সঙ্গে সেই খাবার দেবে। আর গদির গুণ হচ্ছে, গদির উপর চেপে যে কোনো জিনিস রেখে যদি এই চাবুকটা হাতে নিয়ে গদিতে এক ঘা মারা হয়, তাহলে যেখানে মন করবে গদি সেইখানে নিমিষে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

গুণের কথা বলে তারা তিনজন সাইদকে বলল, তুমি আমাদের বিচার করে দাও কে, কী পাবে। সাইদ বলল, এই দ্রব্যগুলি তোমাদের মধ্যে যে কোনো একজনের পাওয়া উচিত। এখন ঠিক করতে হবে কে সেই 'ভাগ্যবান।' তারা বলল, তুমি ঠিক করে দাও, আমরা তা মেনে নেব।

সাইদ বলল, তোমরা আমাকে একটা তীর-ধনুক এনে দাও। তারা বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে ধনুক ও শরকাঠির তীর তৈরি করে তার হাতে দিল। সাইদ বলল, এই ধনুকে তীর জুড়ে আমি নিক্ষেপ করবো, তোমাদের তিনজনের যে কেউ তীরটি প্রথমে পাবে এবং ছুটে সর্বাগ্রে এখানে আসতে পারবে, সেই এসব পাবে। তিনজনে বলল, বেশ তাই হোক। সাইদ জোরে তীর ছুড়ল। তীর অনেক দূরে গিয়ে পড়ল। তিন ভাইও তীর সংগ্রহ করার জন্য ছুটল। সেই সময় সাইদ জালাটি গদির উপর চাপিয়ে, গদিতে চাবুকের ঘা মেরে সে সোজা বাদশাজাদীর বাগানবাড়িতে চলে এলো।

বাদশাজাদী সাইদকে দেখে বলল, কি আবার এনেছ? সাইদ সব বলল। জালা থেকে ভালো ভালো খাবার বের করে তারা খেল। দিন দশেক পর বাদশাজাদী বলল, তেরো নদী, সাত সমুদ্র পারে এক পীরের দরগায় আমার মানত আছে, কিন্তু কি করে যাব? সাইদ বলল, কেন, এই গদিতে চেপে যাব, আর চলে আসব।

বাদশাজাদী সেদিন জালায় হাত দিয়ে এমন সব খাবার চেয়ে নিল, যা খেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পায়খানা চাপবে। এই সব খাবার সাইদকে খাওয়াল। তারপর গদিতে চেপে মানত শোধ দিতে গেল। কিন্তু এ সব ছিল বাদশাজাদীর চালাকি। মানত ছিল না, কিছুই ছিল না।

যাইহোক, সে মিছামিছি সিন্নিগুলি সমুদ্রের জলে ফেলে দিয়ে ফিরে এলো। এদিকে সাইদের তখন খুব পায়খানা চেপেছে। সাইদ বলল, তুমি একটু দাঁড়াও আমি মলত্যাগ করে আসি। সাইদ যেই একটু আড়ালে মলত্যাগ করতে গিয়েছে, অমনি বাদশাজাদী গদিতে চেপে চলে এলো নিজের বাগানবাড়িতে। সাইদ এসে দেখে কোথায় বাদশাজাদী, আর কোথায় তার গদি, চাবুক? মনের দুঃখে সে কাঁদতে লাগল।

 কান্না শুনে সমুদ্রের পীর খাজাখিজির উঠে এসে তাকে একটি পাখি করে দিয়ে বলল, তুই উড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে চলে যা। তারপর তুই মুক্তি পাবি।

সাইদ পাখি হয়ে উড়তে উড়তে লোকালয়ে চলে এলো, তারপর এক রাজার বাড়ির চিলেকোঠায় গিয়ে বসল। সেখানে ছিল রাজার অবিবাহিতা যুবতী কন্যা। সুন্দর একটি পাখি দেখতে পেয়ে কন্যাটি সে ধরতে গেল; পাখিও ধরা দিল। পাখির গায়ে মাথায় যেমনই কন্যা হাত বুলিয়েছে, অমনি পীরের দেওয়া ঔষধটি পড়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে সাইদ আবার সাইদ হলো।

রাজকন্যা বলল, তুমি কে? সাইদ তার দুঃখের কথা বলল। সব শুনে রাজকন্যা বলল, আমি অবিবাহিতা, তোমাকে যদি সিঁড়ি বেয়ে নামিয়ে দিই, তাহলে আমার দুর্নাম হবে। তুমি একটু অপেক্ষা কর। আজ আমাদের বাড়িতে ভোজ, বহু লোক খেতে আসবে, খাওয়া শেষ হলে এঁটো পাতা এই দালানের পাশের গলিতে ফেলবে, তুমি রাতে পাতার উপর লাফিয়ে পড়বে, তাহলে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। কন্যার সঙ্গে সাইদ বোন-পাতাল (বোন পাতালো)। কন্যা তাকে খাওয়ালো। তারপর রাতে পাতার উপর লাফ দিয়ে রাজবাড়ি হতে চলে এলো।

চলতে চলতে সাইদ এলো এক গভীর বনে। আত্মরক্ষার জন্য রাজকন্যার নিকট সে একটা ধারাল বড় ছুরি চেয়ে নিয়েছিল। বনের মাঝ দিয়ে পথ। বনে ঢুকতেই সন্ধ্যা নামল। পথের পাশে একটা গাছতলায় সাইদ শুয়ে পড়ল।

প্রথম প্রহর শেষ হতে এক বিরাট সাপ গাছের গোড়া বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। গাছের ডালে ছিল বেঙ্গমা-বেঙ্গমী পাখির দুইটি ছানা। তাদের মা-বাবা চরণ করে এখনও ফেরেনি। ছানা দুটো ভয়ে কাঁদতে লাগল। সাইদ উঠে দেখে পাখির ছানা খাবার জন্য সাপটা উঠছে। ছানা দুটি বাঁচানোর জন্য সাইদ একটা ডাল ভেঙে, সাপটাকে মেরে ফেলল। তারপর ধারাল ছুরি দিয়ে কেটে ছানা দুটোকে খাওয়াল; তারপর গাছতলায় শুয়ে পড়ল।

দ্বিতীয় প্রহর রাতে বেঙ্গমা-বেঙ্গমী দুটো মুখে আহার নিয়ে উড়ে আসছে। ছানা তাদের একদম বাঁচে না। কে এসে খেয়ে নেয়। নদী পার হতে বেঙ্গমীর মুখ হতে আহার পড়ে গেল। বেঙ্গমা বলল, ওরে বেঙ্গমী আমাদের ছানা আর নাই, মুখের আহার যখন নদীতে পড়ে গেল, তখন লক্ষণ খারাপ, ফিরে চল, আর ঐ বনে যাব না, অন্য বনে যাব। বেঙ্গমী বলল, একবার বাসাটা দেখে আসি চল, ছানা না থাকলে অন্য বনে যাব।

বাসায় গিয়ে দেখে ছানা দুটো জেগে আছে। ছানা দুটি সব কথা বলে, গাছতলায় শায়িত বন্ধু সাইদের কিছু ভালো করতে বলল। বেঙ্গমা-বেঙ্গমী বলল, এই লোকটি খুব ভালো। তবে এর দুটো মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেছে। তবে তাড়াতাড়ি সে তা ফিরে পাবে।

তারা বলল, আমরা যে গাছে আছি এই গাছের পাতা যদি কোনো মানুষ-মানুষীকে শোঁকানো হয়, তাহলে সে গাধা হয়ে যাবে। আর আমরা যে গাছে আছি তার বাম দিকের গাছের পাতা শোঁকালে গাধা হয়েই কোথায় কী আছে সব বলে দেবে। আর এই গাছের ডান দিকে যে গাছ আছে তার পাতা শোঁকালে আবার গাধা মানুষ হবে।

সাইদ সকালে উঠে তিন রকম গাছের পাতা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবার বাদশাজাদীর বাগানবাড়িতে গিয়ে হাজির হলো। বাদশাজাদী তাকে দেখে বলল, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য আমি ফেলে রেখে এসেছিলাম, তবে সত্যিই তুমি বাপের ব্যাটা। সাইদ বলল, আমার সি-মোরগের মাথা ও জালা-গদি-চাবুক দাও। কিন্তু সে দিতে চায় না।

সাইদ তখন তাকে একটা পাতা শুকিয়ে দিল, অমনি মেয়েটি গাধা হয়ে গেল। তারপর একটা লাঠি দিয়ে গাধাটাকে মারতে লাগল। তারপর দ্বিতীয় পাতাটি শোঁকাল। অমনি গাধারূপী বাদশাজাদীর সি-মোরগের কল্লা ও জালা-গদি-চাবুক কোথায় আছে জেনে নিয়ে সেগুলি সংগ্রহ করল। সি-মোরগের কল্লা সে আবার গিলে নিল। জালা-গদি-চাবুক নিজের কাছে রাখল। তারপর তৃতীয় পাতাটি শোঁকিয়ে আবার বাদশাজাদীকে মানুষ করে দিল।

তারপর বাদশাজাদীকে বলল, তুমি এখানে থাক, আমি আর তোমার নিকট থাকব না। বাদশাজাদী বলল, আমাকে ক্ষমা কর, আমি তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম মাত্র। তুমিই বাপের ব্যাটা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে বিয়ে কর। সাইদ বলল, আমি কিছুতেই ক্ষমা করবো না। বাদশাজাদী বলল, তোমাকে করতেই হবে। তবে শোন একটা গল্প:

এক দেশে ছিল এক ধার্মিক ব্যক্তি। তার ছিল তিনজন বুদ্ধিমান পুত্র। তিন পুত্রের জন্য তিনটি লাল (মণি) একটা বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা একটি করে লাল ভাগ করে নেবে। কিছুদিন পর ধার্মিক লোকটি মরে গেল। ছেলে তিনজন বাক্সটি নিয়ে এসে খুলে দেখল দুটি লাল আছে, একটি লাল নাই।

বাড়িতে অন্য কোনো লোক ছিল না, তাহলে ভাইদের মধ্যে কোনো একজন একটি লাল নিয়েছে। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি! কয়েক ক্রোশ যাবার পর তা ঠিক করার জন্য তারা তিনজনে কাজীর দরবারে যেতে লাগল।

তিন ভাই সদর পথ দিয়ে যাচ্ছে। একজন লোকের সঙ্গে তাদের দেখা। বড় ভাই দেখল লোকটি কিছু খুঁজছে। বড় ভাই শুধাল, "আচ্ছা ভাই, তোমার কি কোনো গাধা হারিয়েছে?" লোকটি বলল, হ্যাঁ। বড় ভাই বলল, “গাধাটার কি বাঁ চোখ কানা?” লোকটি বলল হ্যাঁ। দ্বিতীয় ভাই বলল, “গাধার পিঠের ছালার মধ্যে কি সিরকার টিন আছে?” লোকটি বলল হ্যাঁ। ছোট ভাই বলল, "আচ্ছা, গাধাটির লেজের চুল দুই একদিন আগে ছাঁটা হয়েছে?" লোকটি বলল, হ্যাঁ।

তারপর লোকটি ঐ তিনজনকে বলল, তোমরা নিশ্চয় আমার গাধা দেখেছ, কোথায় আছে বলে দাও। তারা বলল, "এসব আমরা অনুমান করে বললাম।" সে তখন বলল, তাহলে তোমরাই আমার গাধা চুরি করেছ। এই বলে বিচারের জন্য সেই লোকটি ঐ তিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজীর দরবারে গেল।

কাজী লোকটি আলাদা করে রাখল, আর ভাই তিনজনকে আলাদা করে রেখে তাদের কিছু খেতে দিল। কাজী তাদের খেতে দিল গমের রুটি আর খাসীর মাংস। গাধাওয়ালা মনের আনন্দে রুটি ও মাংস খেতে লাগল।

বড় ভাই রুটির টুকরা মুখে দিয়ে বলল, "আরে ছি ছি! রুটির মধ্যে মরা-পোড়া গন্ধ।” মধ্যম ভাই বলল, "আরে এই মাংসটা হারাম", আর ছোট ভাই বলল, "কাজীও তো হারামী।”

কাজী সব কথা শুনে প্রথমে একটা তলোয়ার নিয়ে নিজের মায়ের কাছে গেল ও জন্ম-বৃত্তান্ত শুধাল। আর বলল সত্য কথা না বললে কেটে ফেলবে। কাজীর মা বলল, ঋতু-স্নানের পর তোমার বাপ অন্যত্র বেড়াতে গিয়েছিল। আমি তখন বাড়ির চাকরের সঙ্গে উপগত হয়েছিলাম। এইভাবে তোমার জন্ম।

তারপর সেই তলোয়ার হাতে নিয়ে কসাইয়ের নিকট গিয়ে হাজির, কসাইকে বলল, যে মাংস দিয়েছ তা খাসীর কিনা সঠিক বলবে। কসাই বলল, "হুজুর, আমি মাংসের জন্য বাড়িতেই ছাগল পুষি। যে খাসীটার মাংস দিয়েছে, ছোটতে তার মা মরে যায়। সেই সময় আমাদের বাড়িতে একটা কুকুর বিয়োয় ছিল। ছাগলের ছানাটা ঐ কুকুরের দুধ খেত।"

এই কথা শোনার পর তলোয়ার হাতে আটা বিক্রেতার নিকট গিয়ে বলল, তুমি খারাপ আটা দিয়েছ, কোথাকার আটা। আটা বিক্রেতা বলল, ঐ আটা আমার নিজের জমির। জমির পাশে একটা শ্মশান আছে।

সব শুনে কাজী নিজের বাড়িতে ফিরে এলো। এসে বড় ভাইকে শুধাল, তুমি কিভাবে বুঝলে যে আটায় মরা-পোড়া গন্ধ। বড় ভাই বলল, খেলেই বুঝতে পারা যাবে। মধ্যম ভাইকে শুধাল, তুমি কিভাবে জানলে মাংস হারাম। মধ্যম ভাই জবাব দিল, "হারাম মাংসের উপর পর্দার পর পর্দা থাকে, আর মাংসটার ভিতর পর্দার পর পর্দা। এমন কি হাঁড়ের উপরেও পর্দা। তাই বুঝলাম, এ মাংস হারাম।" ছোট ভাইকে কাজী শুধাল, তুমি কিভাবে জানলে যে, আমি জারজ? ছোট ভাই বলল, "যারা কান পাতিয়ে কথা শোনে তারা হারামী।”

কাজী বুঝল এরা তিন ভাই বুদ্ধিমান। কাজী বলল, গাধাওয়ালার কি ব্যাপার? বড় ভাই বলল, পথে আসতে আসতে দেখলাম একটা গাধার পায়ের টাটকা ছাপ। আরও দেখলাম পথের ডানধারে ফসলগুলো খাওয়া কিন্তু বাঁ দিকের ফসলগুলি অক্ষত। তাই বুঝলাম গাধাটির বাম চোখ কানা। মধ্যম ভাই বলল, সিরকার টিনটা একটু ফুটো ছিল, তাই পথের উপর দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা সিরকা পড়তে পড়তে গিয়েছে, সিরকা ক্ষারযুক্ত। তার জন্য মাটি ফেঁপে উঠেছে। তাই শুধালাম ছালায় সিরকা আছে কিনা? ছোট ভাইকে কাজী শুধাল, গাধার যে লেজ ছাঁটা তুমি কি করে জানলে? ছোট ভাই বলল, "এদেশের গাধার লেজ বেশ বড়, লেজের মাথার চুল ছাঁটা না থাকলে তা মাটি ছুঁতে ছুঁতে যায়। কিন্তু পায়ের ছাপের পাশে চুলের ছোঁয়ার দাগ নাই, তাই বুঝলাম দু'একদিনের মধ্যে লেজের চুল ছাঁটা হয়েছে।" কথা শুনে কাজী গাধাওয়ালাকে ঐ পথের মধ্যেই গাধা খুঁজতে পাঠাল ও গাধা পেলে খবর দিতে বলল। লোকটি দ্রুতবেগে গাধা খুঁজতে গেল।

তারপর কাজী তাদের সব খবর শুনে লালের বিচার করতে বসল। কাজী বলল, তোমরা তিন ভাই বুদ্ধিমান, তোমাদের একজন যখন লাল নিয়েছ, তখন সেটা দিয়ে দাও। তিন ভাই শুধাল, 'কোন ভাই লাল নিয়েছে?'

কাজী বলল, তাহলে একটা গল্প বলে তোমাদের প্রশ্ন করবো। উত্তর শুনে বলে দেব কে লাল নিয়েছে। এই বলে কাজী গল্প শুরু করল:

এক গ্রামে এক বড়লোকের মেয়ের সঙ্গে এক গরীবের ছেলের খুব ভাব ভালোবাসা হয়েছিল। তারা উভয়ে ছিল ধর্মপ্রাণ। তারা উভয়ে কোনোদিন খারাপ কাজ করেনি। গরীব বলে শেষ পর্যন্ত ঐ মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির বিয়ে হলো না। বিয়ের ঠিক হলো এক বড়লোকের ছেলের সঙ্গে। এই ছেলেটিও উদার প্রকৃতির। গরীবের ছেলেটি মেয়েটিকে বলল, তুমি তোমার বিয়ের পর স্বামীর ঘরে যাবার আগে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? মেয়েটি বলল, "হ্যাঁ। পারবে।” এইভাবে তিন সত্য করল।

বিয়ের দিনে গরীবের ছেলেটি নিজের ঘরে থাকল, আর মেয়েটি স্বামীকে সব বলে সেখানে যাবার জন্য স্বামীর নিকট অনুমতি নিল। স্বামী অনুমতি দিল। মেয়েটি গয়না ও ভালো কাপড় খুলে সাধারণ কাপড় পরে যেতে চাইল। স্বামী বলল, ঐ কাপড়-গয়না পরেই যাও।

মেয়েটি ঐভাবে যেতে লাগল। পথে এক ডাকাত তাকে ধরে গয়না-পত্র নিতে চাইল। মেয়েটি ডাকাতকে সব বলে ঐখানে অপেক্ষা করতে বলল, ফিরে এসে তাকে গয়না দিবে বলে সত্য করল। ডাকাত তাকে ছেড়ে দিল ও সেখানে অপেক্ষা করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটি সেই তার গরীব বন্ধুর নিকট এলো ও ডাকল। তার ডাক শুনে ও তার মুখে সব শুনে, গরীবের ছেলেটি বলল, আজ হতে তুমি আমার মা ও তোমার স্বামী আমার বাপ। এই বলে সে আর উঠে এলো না, মেয়েটিকে ফিরে যেতে বলল।

মেয়েটি ডাকাতের নিকট এসে তাকে গয়না দিতে চাইল। ডাকাত সব শুনে তাকে মা বলে ডাকল ও চলে গেল। মেয়েটি তারপর স্বামীর নিকট ফিরে এসে সব জানাল।

এরপর কাজী তিন ভাইদের সকলকে পরপর জিজ্ঞাসা করল, কোন লোকটা ভালো? মেয়েটির স্বামী, না ডাকাত, না গরীবের ছেলেটি?

বড় ভাই বলল, স্বামী ভালো লোক। কাজী তাকে ছেড়ে দিল, বলল তুমি লাল নাওনি। তারপর মধ্যমকে জিজ্ঞাসা করল, মধ্যম বলল, ডাকাত ভালো লোক। কাজী তাকেও ছেড়ে দিল। তারপর কাজী ছোট ভাইকে ডেকে শুধাল। ছোট ভাই বলল, গরীবের ছেলেটি ভালো লোক। কারণ সে ইচ্ছা করলে গোটাকতক গয়না নিতে পারতো। কাজী তখন ছোট ভাইকে বলল, তুমিই লাল নিয়েছ। ওটা তুমি নাও। আর কাজী দুটো লাল বড় ও মধ্যমকে ভাগ করে দিল। কাজী একে-একে ঘরের মধ্যে ডেকে চুপিচুপি জিজ্ঞাসা করেছিল প্রশ্নের উত্তর। তিন ভাই খুশী হয়ে চলে গেল।

এই বলে বাদশাজাদী বলল, কাজী তার মা, মাংস বিক্রেতা কসাই ও আটাওয়ালাকে মাফ করে দিল। তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না?

সাইদ তখন বাদশাজাদীকে ক্ষমা করে বিয়ে করল। তারপর গদিতে চেপে বাদশাজাদীকে নিয়ে বড় ভাই সাদ যেখানে আছে, সেখানে এসে হাজির হলো।

স্বামী-স্ত্রী সেখানে এসে দেখল, সাদ রাজা হয়ে তার দুই পুত্রের বিচার করছে। কোনো পরিচয় না দিয়ে তারা বিচার দেখতে লাগল।

মহারাজা সওদাগরকে শুধাল, কি তোমার অভিযোগ? সওদাগর বলল, মহারাজ গতকাল আমি আপনার রাজ্যে এসেছি। এসে আপনার এই দেশের পূর্বতন রাজা ছিলেন আমার বন্ধু, তার দেখা পেলাম। শুনলাম পূর্বতন রাজা মারা গেছে, আপনি রাজা হয়েছেন। আপনি আমার কথা শুনে বললেন, ঠিক আছে আপনি আমার বন্ধু। আপনি আমাকে বললেন পাশা খেলতে জান কি না। আমি বললাম জানি, তখন আপনি বললেন আজ আমার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করুন, রাতে দু'জনে পাশা খেলব। আমি বললাম, দরিয়ার (সমুদ্র) উপর আমার যে জাহাজ আছে, তাতে নানা রকম দ্রব্য ও আমার বাগদত্তা রমণী আছে। আপনি বললেন, ঠিক আছে আমার দুই পুত্রকে সেখানে পাহারা দিতে পাঠাব।

সকালে গিয়ে আমি আমার বাগদত্তার মুখে শুনলাম ঐ ছেলে দু'টি আমার বাগদত্তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। এখন হুজুর, আপনি বিচার করুন।

রাজা তখন বাগদত্তা মহিলাটিকে বললেন, 'বলুন' আপনার অভিযোগ। মহিলাটি কাপড়ে মুখ ঢেকে রেখেছিল। মহারাজ ছেলে দু'টিকে শুধালেন ওরা কী করেছে। রাজা তার ছেলে দু'টিকে বলল, তোমাদের কিছু বলার থাকলে বল।

ছেলে দুটো বলল, মহারাজ, আমরা জাহাজে পাহারা দিতে গিয়ে, যে ঘরে এই মহিলাটি ছিলেন তার দরজায় পাহারা দিচ্ছিলাম। ছোট ভাই বলল, শুধু শুধু ভালো লাগছে না, একটা গল্প বল। আমি বললাম, আরে গল্প আমাদের নিজেদেরই আছে। ছোট ভাই শুধাল কি?

তখন আমি বললাম, আমার বাবাকে শ্বেত হস্তী শুঁড়ে করে এনে রাজা করে দিয়েছে। উজিরের কন্যার সঙ্গে বাবার বিয়ে হয়েছে। সেই কন্যার আমরা সন্তান। আমাদের মা প্রতিদিন দরিয়ায় স্নান করতেন ও কলসীতে করে জল আনতেন। রাণী হয়েও প্রতিদিন তিনি এই কাজ করতেন! আজ বারো বছর হলো দরিয়ায় স্নান করতে এসে মা কোথায় চলে গেল তার খোঁজ নাই। বড় বড় জাল এনে দরিয়া তোলপাড় করা হলো, মায়ের দেহ পাওয়া গেল না। এই কথা বলে আমরা দুঃখ করছিলাম, মহারাজ।

মহিলাটি বলল, মহারাজ এরপর এই গল্প আরও আছে, আমি জানি, যদি অনুমতি দেন তাহলে বলি। রাজা বললেন, বলুন।

মহিলাটি বলল, তারপর মহারাজ, ঐ ছেলে দুটির মা প্রতিদিনের মতো বারো বছর আগে এই দরিয়ার ঘাটে স্নান করতে আসে। এক সওদাগর জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিল, সে সেই মেয়েটিকে তুলে নেয়। মেয়েটি কিছুতেই যাবে না, কিন্তু সেই সময় ঘাটে বা তার ধারে-কাছে কোনো লোক ছিল না। তাই সওদাগর তাকে তুলে নিয়ে জাহাজ ছেড়ে দেয়। রাণী সওদাগরকে বলে, এখন তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। বারো বছর বাপ-বেটি সম্পর্ক থাকবে, তারপর বিয়ে হবে। আর এখন যদি আমাকে বিয়ে কর, তাহলে আমি বিষ খেয়ে মরব, আমাকে পাবে না। সওদাগর বলল, বেশ তাই হবে।

বারো বছর পার হতে আর তিন দিন বাকি। জাহাজ এই ঘাটে লাগল। রাতে ছেলে দুটি পাহারা দিতে এলো। ছেলে দুটির কথা শুনে বুঝলাম এরা আমার ছেলে। এখন মহারাজ বিচার করুন।

তাছাড়া, আমি যে ঘরে বন্দী ছিলাম, তার পাশের ঘরে এক বুড়ো বন্দী হয়ে আছে। তাকেও ডাকুন মহারাজ।

রাজার লোক গিয়ে সেই বুড়োকে জাহাজের বন্দীশালা হতে নিয়ে এলো। এমন সময় সাইদ বলল, মহারাজ গল্প এখনও শেষ হয় নাই, আরও আছে। সাইদ তখন সি-মোরগের মাংস খাওয়া হতে আরম্ভ করে, দরজায় বাপের চিঠি, পলায়ন ও নিজের কাহিনী বলল।

এই কথা শুনে বুড়ো বলল, মহারাজ, এই গল্প এখনও আছে। এই বলে বুড়ো সি-মোরগ কাহিনীর গোড়ার কথা হতে দরজায় চিঠি দেওয়া পর্যন্ত কাহিনী বলে বলল, মহারাজ, এই সওদাগর সেই ব্যক্তি, আমাকে বন্দী করে রেখেছে, যদি কোনোদিন ছেলে দুটির দেখা পায়, তাহলে তাদের পেট চিরে সি-মোরগের কল্লা ও মাংস বার করে খাবে।

এই কথা শুনে রাজা সওদাগরকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে দিল ও ডালকুত্তা  লাগিয়ে দিল। রাজা তার বাপ, ভাই ও স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে আনন্দে রাজত্ব করতে লাগল। রাজা তার ছোট ভাই সাইদকে খাজাঞ্চীখানার (কোষাগার) কর্তা করে দিল। আর বাপ বসীরকে রাজপোশাক পরিয়ে সিংহাসনের পাশে স্থান দিল।

[ভোলা জেলার নিবাসিনী জমিলা খাতুনের নিকট হতে সংগৃহীত]

Post a Comment