রাজপুত্র ও তার চার বন্ধু । দ্বিতীয় পর্ব

বাংলা রহস্য গল্প


পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন

আকরম শহরে মকরম বাদশা তার বিবিকে নিয়ে সুখে বাস করতে লাগল। সঙ্গে আছে খাঁদী বাঁদী। সে এই বাদশার খুব অনুগত। কারণ তিনটি কঠিন কাজ সে করেছে। বাঘের দুধ, রাক্ষসীর বড় ভাইকে পরাস্ত, আর জ্বালাপোড়া জল এনেছে। এখানে তারা বেশ সুখে আছে।

কিছুদিন পর বাদশার কাছে খবর এলো আকরম শহরের দক্ষিণে এক শহর আছে। সেখানের রাজ-কন্যা খুব সুন্দরী। রাজার এক হাতী আছে, সেই হাতীকে যুদ্ধ করে যে হারাতে পারবে তার সঙ্গে রাজকন্যার বিবাহ হবে আর অর্ধরাজ্য পাবে। আর হাতীকে হারাতে না পারলে হাতী তাকে মেরে ফেলবে। এই কথা শুনে মকরম বাদশা খাঁদি বাঁদীকে নিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হলো।

এক বিরাট ময়দান। রাজা মিত্র সহ বসে আছে। একপাশে রাজকন্যা অপরূপ সাজে বসে গাছে। হাতে তার বরণমালা। এমন সময় রাজার লোকেরা একটি হাতীকে সাজিয়ে ময়দানে নিয়ে এলো। মকরম বাদশা ময়দানে নেমে পড়ল। প্রথমে হাতী মকরম বাদশাকে শুড় দিয়ে ধরে টানাটানি করে হারাতে পারল না, হাতী সরে গেল। এরপর মকরম বাদশার পালা। বনে বনে পশুর সঙ্গে যুদ্ধকরা বীর, শুড় চেপে ধরে আলাদা ছক্কা করতে লাগল এবং হাতীকে তুলে দক্ষিণ দিকে ছুড়ে দিল। হাতী গিয়ে কোথায় পড়ল কে জানে!

বাজকন্যা ছুটে এসে তার গলায় বরণমাল্য দিল। বাদশা বলল, হাতী কোথায় পড়েছে দেখতে হবে। এই বলে কন্যাকে সেখানে রেখে, খাঁদী বাঁদীকে সাথে নিয়ে কোথায় হাতী পড়েছে দেখতে গেল। খাঁদী বাঁদীকে নিয়ে বাদশা চলেছে। পথিমধ্যে এক দীঘিতে একটা লোক ছিপ ফেলে মাছ ধরছে। লম্বা তালগাছের ছিপ, শণের রসার সুতো আর বেলগাছের ডালের ফতা কাঠি। লোকটা অনায়াসে ছিপ তুলছে আর ফেলছে। 

বাদশা তাকে ডেকে বলল, তুমিতো ভাই বড় পালোয়ান। ছিপওয়ালা বলল, আমি আর কি পালোয়ান আকরম শহরে মকরম বাদশার নাম শুনেছ? সে এক হাতি এমন ভাবে ছুড়েছে যে আমার কানের পাশ দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল। পালোয়ান হবে হয়তো সেই আকরম শহরের মকরম বাদশা। বাদশা বলল, আমি মকরম বাদশা। ছিপ রেখে সে তখন বলল আমি আপনার সঙ্গে হাতী কোথায় পড়েছে দেখতে যাব।

তারা তিনজনে যায়। আর কিছুদূর গিয়ে তারা দেখল এক চাষী বার বিঘে জমিতে লাঙ্গল দিয়ে ধুলোয় বীজ ফেলছে। একটা আস্ত গোলা হাতে নিয়ে সে বীজ ছড়াচ্ছে। তিন জনে বলল, বাবা পালোয়ান বটে। আস্ত এক গোলা ধান নিয়ে বীজ ছড়াচ্ছে! চাষী বলল, আবে আমি আর কি পালোয়ান। পালোয়ান আকরম শহরের মকরম বাদশা। সে একটা হাতী এমন ভাবে ছুড়ে দিয়েছে যে আমার মাথার উপর দিয়ে সাঁ কবে বেরিয়ে গেল। বাদশা বলল, আমিই মকরম বাদশা। চাষী বীজ ছড়ান রেখে বলল, চল আমি তোমার সাথে যাব।

চারজনে যায়। যেতে যেতে পথে পড়ল ছোট এক নদী। নদীতে দু কিনারী বান। এক গয়লার পো ছোট নদীর এদিকে এক পা ওদিকে এক পা রেখে হাতে করে এক একটা গরু ধরছে আর পার করছে। চারজনে এই গরু পার করা দেখে বলল, পালোয়ান বটে! সে বলল, মেলা গাই, রোজ রোজ দুধ খায়। গায়ে বল তো হবেই। সব শুনে গয়লার পো বলল, আমার চেয়ে বড় পালোয়ান আকরম শহরের মকরম বাদশা। বিয়ে করতে গিয়ে সে এত জোরে একটা হাতী ছুড়ে দিয়েছে যে হাতীটা আমার গরুর পালের উপর দিয়ে সাঁ করে চলে গেল। তার কাছে আমরা ছেলেমানুষ। বাদশা বলল, আমিই আকরম শহরের মকরম বাদশা। গয়লার পো বলল, চল তোমার সঙ্গে যাব, হাতী কোথায় পড়েছে দেখব।

যেতে তারা এক সমুদ্রের ধারে হাজির হলো। পার হবার নৌকা নাই। বসে বসে পাঁচজনে ভাবছে কিভাবে পার হবে। এমন সময় এক তিমি মাছ ভেসে উঠে বলল, আমি তোমাদের পাঁচজনকে পার করে দিতে পারি, তবে একজনকে খাব। এই সর্তে রাজী হলে তবে পার করে দেব। তারা রাজী হলো। বাদশা বলল, আমাকে খাবে। যাও, আমার চার বন্ধুকে পার করে দিয়ে এসো। তাদের পার করে দিয়ে এলো।

এপারে এসে বাদশাকে খেতে চাইল। বাদশা বলল, আমাকে ঐপারে নিয়ে চল, বন্ধুদের একবার শেষবার দেখব তারপর খাবে। তিমি বলল, বেশ। ওপারে গিয়ে বাদশা তিমিটার লেজ ধরে পাড়ে জুড়ে ফেলল, তারপর মারল দুই আছাড়। তিমি মরে গেল। তাকে পুড়িয়ে পাঁচজনে খেল।

তারপর তারা হাতি নিয়ে রাজ্যে ফিরে গেল ও রাজকন্যাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল।

Post a Comment