এক দেশে ছিল এক রাজা। এই রাজার ছিল এক রূপসী কন্যা। সে দিন রাত নানারকম ফুল নিয়ে খেলা করে। এই রাজার বাড়ীতে ছিল এক রাখাল। সুন্দর তার চেহারা। সে মাঠে-মাঠে রাজার গরু চরায়। রাখালের আছে এক বিধবা বুড়ী মা, আর মাটির একটা ঘর।
রাজার নগরের কিছু দূরে মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এক মাঝারী নদী। এই নদীর ধারে বট গাছের তলায় রাখাল তাল পাতার বাঁশি বাজায়, আর গরু চরায়। একদিন রাখাল দেখল নদীর স্রোতের উপর দিয়ে সাতরঙা সুন্দর একটা ফুল ভেসে যাচ্ছে। রাখাল যেই নদীতে নেমে ফুলটা ধরতে গেল, আর অমনি ফুলটা মাঝ নদী দিয়ে ভেসে চলে গেল! রাখাল প্রত্যেক দিন ঐ সাতরঙা ফুল ভেসে যেতে দেখে, কিন্তু ফুল ধরতে পারে না।
এই রাখাল রাজার বাড়ী আসে, গরু গুলোকে বেঁধে দিয়ে বাড়ীতে নানা কাজ করে, আর দেখে রাজকন্যা বিস্তর ফুল নিয়ে খেলা করছে। একদিন রাখাল রাজকন্যাকে বলল, রাজকন্যা! তুমি তো বহু ফুল নিয়ে ফুল খেলা কর কিন্তু আমি এমন একটা ফুল দেখেছি যে ফুল তুমি দেখ নাই, তোমার বাবা, রাজা দেখে নাই।
কথা শুনে রাজকন্যার খুব দুঃখ হলো। সে গিয়ে গোঁসা ঘরে খিল দিল। এই কথা শুনে রাজা আঁকিবাঁকি করে গোঁসাঘরের দরজায় গিয়ে খিল খুলতে বলল। রাজকন্যা বলল, তোমার বাড়ীর রাখাল আমাকে বললে যে, সে এমন একটা ফুল দেখেছে যা আমি দেখি নাই বা আমার বাপ দেখে নাই। এই ফুল আমার চাই।
রাজা বলল, এ আবার বেশী কথা কি? রাখাল তো আমার অধীনে কাজ করে, তাকে আজই ফুল আনতে পাঠাবো।
এই কথা শুনে রাজকন্যা গোঁসা ঘরের খিল খুলে বাইরে এলো। রাজা তারপর রাখালকে তলব করল। তারপর বলল, যে ফুল আমার মেয়ে বা আমি দেখি নাই সেই ফুল এনে দিতে হবে। রাখাল বলল, মহারাজ! আমাকে কিছু টাকা দিন কারণ বাড়ীতে আমার বিধবা মা আছে তাকে কিছু দিতে হবে, আর আমি কিছু নিয়ে যাব। রাজা রাখালকে দু হাজার টাকা দিল। এক হাজার টাকা সে মাকে দিল, আর এক হাজার টাকা সে নিয়ে ধারে উজানি পথে চলতে লাগল।
রাখাল হেঁটেই চলেছে। প্রতিদিনই দেখে নদী দিয়ে ফুল কতদিন পর ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু সে ফুল সে ধরতে পারে না। সেই নদীর ধারে দেখতে পেল এক বন। বনের মধ্যে নদীর ধারে পাঁচটি গাছ গোল করে লাগান। তার মাঝখানে এক মুনি বসে তপ করছে। রাখাল তার সামনে গিয়ে হাজির হয়ে জোড় হাতে দাড়াল।
মুনি বলে, বেটা কে রে? আমার তপ ভঙ্গ করলি! তাড়াতাড়ি পিছনে বস নইলে ভস্ম করে দেব। রাখাল তখন তাড়াতাড়ি পিছনে বসে বলছে মামা গো আমি। মুনি তখন বলছে, আরে ভাগ্নে না নারদ, তা না হলে মামার কাছে কে আসবে! তা বাবা, বার বৎসর তপস্যা করছি। অনেক দিন ভাত খাইনি, তা বাবা, চেলেডেলে দুটো রান্না কর, মামা ভাগ্নেয় খাই। তারপর তোর কথা শুনব।
এই বলে মুনি রাখালের হাতে একটি চাল আর একটি ডাল দিল। রাখাল চাল আর ডালটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর বলছে, একটা চালে আর একটা ডালে কী হবে! মুনি বলল, বাবা দুটো হাঁড়িতে জল দিয়ে রান্না করেই দেখ না! রাখাল রান্না করে দেখল এক হাঁড়ি ভাত ও এক হাঁড়ি ডাল রান্না হয়েছে।
ডাল ভাত দুই মামা ভাগ্নেয় পেট পুরে খেয়ে মুনি শুধাল, বল বেটা কি চাস? রাখাল বলল, মামা সাতরঙা ফুল নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। এই ফুল কোথা গেলে পাব বলে দাও। মুনি বলল, এই ফুল দেখে আমি বার বৎসর তপস্যা করছি কিন্তু ফুল পাইনি। তবে আর কিছুপথ এগিয়ে গিয়ে দেখনি তোর আর এক মামা আছে। তার কাছে যা সে তোকে ফুলের খবর বলে দেবে। তবে বাবা, ফুল যদি পাস, আমাকে একবার দেখিয়ে যাস, আমি তোকে একটা বস্তু দেব।
রাখাল নদীর ধার ধরে যায়, আর, যায়। এরপর রাখাল দেখল নদীতে দুটো ফুল ভেসে আসছে। অনেক দিন পর রাখাল দেখল নদীর ধারে আর একটা বন। বনের পাশে নদীর ধারে পঞ্চ বৃক্ষের মাঝে এক মুনি বসে তপ করছে। রাখাল তার সামনে জোড় হাতে দাঁড়াল।
মুনি বলে, কে রে বেটা! আমার তপস্যা ভঙ্গ করলি! শিঘ্রী পিছনে গিয়ে বস, নইলে ভস্ম করে দেব। রাখাল তাড়াতাড়ি পিছনে গিয়ে বসে বলল মামা গো, আমি তোমার ভাগ্নে। বড় মামা তোমার কাছে আমাকে পাঠালে। মুনি বলল বস বেটা বস ভাগ্নে, না নারদ। ভাগ্নে না হলে কে আসবে! এই বলে নামা, ভাগ্নের হাতে আধখানা চাল, আধখানা ডাল দিয়ে বলল, বাবা! বার বৎসর তপস্যা করছি, ভাত খাই নি; আজ চেলেডেলে দুটো রান্না কর, মামা ভাগ্নেয় দুটো খাই, তারপর কথা শুনবো।
ভাগ্নে চাল-ডালের ব্যাপার আগেই জেনে ছিল। তাই এক হাঁড়ি ভাত আর এক হাঁড়ি ডাল রান্না করে দুই মামা ভাগ্নেয় খেল। তারপর রাখাল শুধাল, মামা সাতরঙা ফুল এই যে নদীতে ভেসে যাচ্ছে, এ ফুল কোথা পাব? মুনি বললে, আমি বার বৎসর তপস্যা করছি। কিন্তু এই ফুল ভেসে যেতেই দেখছি। ফুলের গোড়া কোথায় তার সন্ধান পাই নি। তবে বাবা, তুই আরও এগিয়ে যা, দেখবি নদীর ধারে বনের পাশে তোর ছোট মানা তপস্যা করছে। পারে তো, সে সন্ধান দিতে পারবে। তবে বাবা, ফুল যদি পাশ আমাকে দেখিয়ে যাস; আমি তোকে এক বস্তু দিব।
তারপর রাখাল নদীর ধার ধরে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দিন পর সে আবার আর একটা গহীন বন দেখতে পেল। নদীর ধারে বনের পাশে পথটির গাছে ঘেরা এক ছায়ায় এক মুনি বসে বসে তপ করছে। রাখাল তার সামনে জোড় হাত করে দাঁড়াল।
মুনি বললে, কে রে! বেটা আমার তপ ভঙ্গ করলি, শিস্ত্রী এসে পিছনে বস, নইলে ভস্ম করে দেব। রাখাল তাড়াতাড়ি পিছন গিয়ে বসতে বসতে বলল, "মামা গো! আমি তোমার ভাগ্নে।" মুনি তখন বললে, তাই বল ভাগ্নে না নারদ। ভাগ্নে না হ'লে কে আর আসবে! তা বাবা ভাগ্নে, তানেক দিন ভাত খাই নি। চেলেডেলে দুটো রান্না কর বাবা। মামা ভাগ্নেয় আগে খাই, তারপর তোর কথা শুনবো। এই বলে মুনি রাখালের হাতে এক কুন চাল ও এক কুন ডাল দিল।
রাখালের এ সব আগে হতে জানা ছিল। তাই সে নদীতে জল আনতে গেল। 'হাঁড়িতে জল ভরতে গিয়ে সে দেখল নদীতে সেই রকম ফুল অনেক ভেসে যাচ্ছে। তারপর ডাল ভাত রান্না হলো। তারা দুই জনে পেট ভরে খেল। তখন মুনি বলল, বল বাবা, কি তোর কথা।
রাখাল বলল, মামা, এই নদী দিয়ে চতুরাং ফুল ভেসে যায় সে ফুল ধরা যায় না। এই ফুল কোথায় পাব? মুনি বলল, বাবা, এখানে সাত কন্যা বাস করে। তারা আসলে পরি। তাদের ছোটটির নাম ফুলবতী। এই ফুলবতী নদীতে গিয়ে স্নানের পর চুল ঝাড়ে, তখন চুল থেকে গাদা গাদা ফুল বেরিয়ে এসে নদীতে পড়ে। এ ফুল কাউকে ধরা দেয় না, চলে যায় সাগরে। তা বাবা সেই মেয়েকে যে বিয়ে করবে, সেই পাবে চতুরাং ফুল।
রাখাল বললে, মামা কি ভাবে এই ফুলবতীকে পাব? মুনি বললে প্রতিদিন রাতে ফুলবতীরা সাত বোন বনের মধ্যে এক সরোবরে স্নান করতে আসে। সরোবরের পাড়ে কাপড় রেখে তারা জলে খেলা করে। সেই সময় সব কাপড় নিয়ে আসতে হবে। তবে ফুলতীকে পাওয়া যাবে। তারপর রাত হলে মুনি রাখালকে সরোবরের ধারে পাঠাল আর বলে দিল সরোবরের দক্ষিণ দিকে একটা বাঁধান ঘাট আছে। ঘাটের দক্ষিণে আছে একটা বটের ঝুরি নামা গাছ। সেই ঝুরির আড়ালে বসে থাকতে হবে ও সুযোগ বুঝে কাপড় গুলো মিয়ে আসতে হবে।
মুন্সির কথামত রাখাল গিয়ে বট গাছের কুরির আড়ালে বসে থাকল। ফলবতীকে নিয়ে ছয় বোন এলো ও নাচ গান করল, তারপর ঘাটের উপর কাপড় বেখে জলে নাইতে গেল। রাখাল সুযোগ বুঝে কাপড় গুলো গুটিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে। সাত বোন বলল, যা চাও তাই দিব, কাপড় গুলো দাও। রাখাল যেই পিছন ফিরে তাকিয়েছে, অমনি সাত বোনে তাকে ভস্ম করে ছাই করে মুনির কাছে ফেলে দিল।
মুনি তাকে আবার মানুষ করে দিল। তারপর বলল, যা বেটা ফিরে যা, তুই পারবি না। রাখাল মুনির পা দুটো চেপে ধরে বলল, মামা! আমাকে আরেকটি সুযোগ দিন!
দিন দুই পর রাখাল আবার গিয়ে বটের ঝুরির আড়ালে লুকিয়ে রইল। নাচ-গানের পর যেই মেয়ে গুলো কাপড় খুলে রেখে জলে নাইতে নেমেছে, তামনি সুযোগ বুঝে রাখাল-কাপড় নিয়ে চম্পট দিল। মেয়েরা যত তাকে ডাকে তত সে ছুটে পালায়। তখন মেয়েরা মুনির কাছে এসে বলল, এখানে একজন যুবক এসে ঢুকেছে, আর সে আমাদের কাপড় নিয়ে পালিয়ে এসেছে। আমাদের কাপড় দিতে বল।
মুনি বলল, এক শর্তে কাপড় দিতে পারি, তা হলো ওর সঙ্গে তোমাদের ছোট বোনের বিয়ে দিতে হবে। মেয়েরা বলল, বেশ তাই হবে; তবে তাকে চিনে নিতে হবে। মুনি বলল, বেশ তাই হবে। মুনি রাখালকে মেয়েদের কাপড় দিতে বলল। কাপড় নিয়ে মেয়েরা চলে গেল। পরদিন রাতে রাখালকে মেয়ে চিনে গলায় মালা দিতে হবে। মুনি ভাল ভাল ফুল এনে একটা মালা গেঁথে রাখালের হাতে দিয়ে বলল, দেখবি যে মেয়েটা দেখতে কুৎসিত, কুঁজো তার গলায় মালা দিবি। কোন সুন্দরী রূপসীর গলায় মালা দিবি না।
তাই হলো। রাখাল দেখল ছয়টা মেয়ে রূপবতী ও সুন্দরী, একজন কুৎসিত, কুঁজো। ঐ মেয়ে ছয়জন বলে আমার গলায় মালা দাও। রাখাল গিয়ে সেই কুৎসিত মেয়েটার গলায় মালা দিল। এই ভাবে ফুলবতীর সঙ্গে রাখালের বিয়ে হলো। ফলবতীর রূপ যেন ধরে না। সে একবার চুল ঝাড়া দিল অমনি রাশি রাশি চতুরাং ফুল চুল হতে ঝরে পড়ল। ফুলবতী রাখালকে একটা বাঁশের বাঁশি দিয়ে বলল, এই বাঁশীতে যখনি তুমি ফু দিয়ে বাজাবে তখনি আমি তোমার কাছে হাজির হবে। তারপর রাখাল মুনির কাছে ফিরে এলো। মুনির কাছ হতে বিদায় নিয়ে নদীর স্রোতের ধারে ধারে যে পথে সে এসেছিল সেই পথ দিয়ে সে হাঁটতে লাগল।
অনেক দিন হাঁটার পর দ্বিতীয় মুনির সঙ্গে দেখা। সে বলল কি পেয়েচিস্ আমাকে দেখা। রাখাল তাকে বাঁশীটা দেখাল। এই মুনি আসলে ঐ ফুলবতীর জন্য বসে ছিল। তাই সে বলল, বাবা আমার নিকট একটা বাধন দড়ি আর মারণ লড়ি আছে। এটার কাজ হলো দড়িটা ছুড়ে দিয়ে যাকে খুশী বাঁধতে বললেই ছাদন দড়ি তা বেঁধে ফেলবে, আর লড়িকে মারতে বললেই সে মার লাগাবে। এই বলে সে, দড়ি-লড়ি পরীক্ষা করে দেখাল। মুনি বলল, বাবা বাঁশীটা দিয়ে তুই এই দুটো নিয়ে যা। রাখাল বাঁশীটা দিয়ে ছাদন দড়ি, আর বাঁধন লড়িটা মুনির কাছ থেকে নিল।
তারপর নদীর ধারে এসে দড়ি আর লড়িকে বলল, দড়ি-লড়ি এখন তোমরা কার? দড়ি-লড়ি বলল, আগে ছিলাম মুনির এখন তোমার, তুমি যা বলবে তাই করবো। রাখাল বলল, যাও মুনিকে বেঁশ ঘা কতক দিয়ে আমার বাঁশীটা নিয়ে এসো। দড়ি গিয়ে মুনিকে বাঁধল, আর লড়ি মারতে লাগল। মুনি বলল তোরা আমার দড়ি আমার লড়ি আর আমাকে মারছিস্? দড়ি-লড়ি বলল, আগে ছিলাম তোমার, এখন রাখালের। রাখাল বাঁশী ফেরৎ নিয়ে নদীর ধার ধরে আবার চলতে লাগল।
কতদিন পর হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই প্রথম মুনির সঙ্গে দেখা হলো। মুনি বলল, ভাগ্নে ফুল পেয়েছিস্? রাখাল বলল, এই বাঁশীটা পেয়েছি মামা। এই মুনিও ঐ ফুল ও ফুলবতীর জন্য তপস্যা করছিল। বাঁশীটা দেখে সে সব বুঝতে পারল। মুনি বলল, বাবা বাঁশীটা আমাকে দাও, আমি তোমাকে একটা বস্তু দিব। রাখাল বলল, বস্তুটা কি? মুনি বলল, একটা বাঁশের চোঙ্গা। এই চোঙ্গার ভিতরে ডাকিনী, যোগীনী, ভূত, প্রেত, বাঘ, ভালুক ভরা আছে। বিপদ বুঝলেই এদের চোঙ্গা থেকে ছেড়ে বলতে হবে, যুদ্ধ কর, এরা যুদ্ধ করবে। আবার যখন বলবে চোঙ্গায় ঢোক, অমনি ঢুকবে। মামা পরীক্ষা করে চোঙ্গের মহিমা দেখাল। বাঁশীটা হাতে দিয়ে চোঙ্গাটা নিল। তারপর দড়ি ও লড়ির সাহায্যে বাঁশী উদ্ধার করল।
দড়ি, লড়ি, চোঙা আর বাঁশী নিয়ে রাখাল নিজের বাড়ীতে এলো। এই হাঁটাহাঁটিতে রাখাল ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই সে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এমনি করে দু'দিন সে বিশ্রাম করতে লাগল। এদিকে রাজা খবর পেয়েছে যে রাখাল এসেছে। তার মেয়ে ফুল চাইছে। রাজা দু'জন পাইক পাঠাল। রাখাল বলল, এখন যাব না। পাইকরা খবর পাঠাল রাজাকে। রাজা তখন চারজন বলবান পাইক পাঠাল ধরে আনার জন্য। তারা রাখালকে যেই ধরতে গেল, রাখাল দড়ি লড়ি দিয়ে তাদের বেঁধে আচ্ছা করে মার দিল। তারা রাজাকে গিয়ে দুঃখের কথা জানাল। রাজা তখন একদল সিপাই পাঠিয়ে দিল রাখালকে ধরে আনার জন্য। তখন রাখাল তার চোঙ্গার মধ্যে যত ডাকিনী যোগিনী ছিল সকলকে ছেড়ে দিল। তাদের আক্রমণে রাজার সৈন্যরা ভয়ে পালাতে লাগল। চোঙ্গার ডাকিনী যোগিনী, বাঘ, ভালুক, রাজধানী ঘিরে ফেলল। রাজা ভয় পেয়ে বলল, আমার এই রাজকন্যার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিব, আর অর্ধরাজ্য দান করবো। রাখল তখন ডাকিনী-যোগিনী ভূত, প্রেতদের বলল, ঢোক চোঙ্গার ভিতরে। অমনি সকলে চোঙ্গার মধ্যে ঢুকে পড়ল।
রাখালকে সসম্মানে রাজ বাড়ী নিয়ে গেল রাজা। রাখাল বাঁশীতে ফুক দিল আর অমনি ফুলবতি নেমে এলো। রাখাল তাকে একবার চুল ঝাড়া দিতে বলল। যেমনি ফুলবতী চুল ঝাড়া দিল অমনি রাশি রাশি ফুল জড় হলো। আর ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তার গন্ধ। রাজা বলল, সত্যিই আমি এ ফুল দেখি নাই।
রাজকন্যার সঙ্গে রাখালের বিয়ে হলো। রাখাল অর্ধরাজ্য, ফুলবতী ও রাজ কন্যাকে নিয়ে সুখে বাস করতে লাগল।
[ মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার, দক্ষিণখণ্ড গ্রামের শ্রীমোহন পটুয়ার নিকট হতে সংগৃহীত।]
