এক গাঁয়ে ছিল এক চাষী। তার ছিল স্ত্রী ও একটি শিশু। একদিন কৃষক দূর মাঠের জমিতে চাষ দিতে গিয়েছে। খুব গান গাইছে, আর ধূলোর লাঙ্গল বয়ছে। মাটিতে ভাল বাত আছে, চাষ দিতে গরু বা মুনিষের কোন কষ্ট হচ্ছে না।
মাঠটা অনেক দূর। কাছাকাছি গাঁ নাই। তিন পাশে দু-তিন কোশ দূরে গাঁ। বেলা একটু বাড়লে চাষীর শিশু ছেলেটা বাপের জন্যে মাঠে খাবার নিয়ে গেল। চাষী ছেলেকে নিয়ে জল খাবার খেল। তারপর আমেজ করে নারকেলের হুঁকে টানতে টানতে বলল, "বেটা দেখচিস্, সাত সমুদ্র তের নদী পারে একপাল মোষ চরছে।"
ছেলেটা বলল, "হেঁ বাপ, দেখতে পাচ্ছি, একটা মোষের ডান চোখে ওয়ানি পোক ঘুর খুব করছে।” এত বড় মিথ্যে কথা শুনে বাপ ছেলেটার গালে মেরে দিল এক চড়। ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে খাবারের থালা বাটি নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল ও তার মাকে সব কথা বলল।
তার মা সব কথা শুনে রান্না করা ভাত তরকারীর কিছু নিজে খেল ও পুত্রকে খাওয়াল। তারপর ভাত, তরকারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখল। দুপুর বেলায় লাঙ্গল, গরু নিয়ে চাষী বাড়ী এলো। লাঙ্গল ছেড়ে দিয়ে মাঠের পুকুরে সে গরু দুটোর গা ধুইয়ে দিয়ে, নিজেও চাঁন করে নিল। তাই সে বৌকে বলল, “বৌ, ভাত দে।” তারপর ঘরে গিয়ে দেখল ভাত তরকারীর হাঁড়ি ভাঙা, আর ভাত তরকারী মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে আছে। চাষী খুব রেগে বৌকে শুধাল এসব কি?
বৌ তখন তার স্বামীকে বলছে:
সাত সমুদ্দুর তের নদী
পারে চরে মোষ।
আমার ছেলেকে তুই
এমন কথা কস্।
সাত সমুদ্দুর পার হতে
মোষে মেরেছে লাথ।
এখানের ভাত তরকারীর হাঁড়ি
হয়েছে কুপোকাত।
বৌ-এর কথা শুনে চাষী বুঝল যে তার বৌ তার উপর রাগ করেছে। চাষী ভয়ে আর কিছু বলল না।
[ লোককথাটি বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার কৃষ্ণবাটী গ্রামের এক চাষীর নিকট হতে সংগৃহীত।]
